প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা চর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলোকে দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। জাতীয় গ্রিড এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণের পথে এখনো বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা মানুষগুলোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। রংপুর জেলার গংগাচড়ার উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ দিয়েছিল, তা এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। ইতিমধ্যে দেশের প্রায় ৯৯ ভাগ এলাকায় বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। দুর্গম চর এলাকা ও পাহাড়ি অঞ্চলের অবশিষ্ট ঘর-বাড়িতেও দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছানোর কার্যক্রম চলছে, যা বাস্তবায়ন হলেই শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে। পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) তথ্য অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিহীন প্রত্যন্ত এবং চর এলাকায় সৌর শক্তির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলার রংপুর সদর ও গংগাচড়া উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় মোট ১২ হাজার ১৭০টি সোলার হোম সিস্টেম বসানোর কথা ছিল। সেখানে ৯ হাজার ৮৪৫টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করতে সক্ষম হয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা করা হয়েছে পিডিবিএফ।
গংগাচড়ায় সর্বশেষ নির্বাচিত ৪৫০৪ জনের মধ্যে থেকে যারা কন্ট্রিবিউশনের অর্থ ও এনআইডি জমা করা এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করেন, চলতি বছরের জুন মাসে তাঁদের ৭১২ জনকে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করা হয়। ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তালিকাভুক্ত ৯০ পরিবারের মাঝে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করতে পারেনি পিডিবিএফ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসলে তার নির্দেশে তাৎক্ষনিক ভাবে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে সেই ৯০ জনের বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা অন্যান্য পরিবারগুলোকেও দ্রুত বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আনার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা গংগাচড়া উপজেলার অবশিষ্ট ৩ হাজার ৭০৮ পরিবারকেও দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এখন পযর্ন্ত ৬২ লাখ হোম সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এসব সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ২৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করা এসব সোলার প্যানেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছেন ২ কোটি মানুষ।
শত ভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। লক্ষ্য অর্জনে পথে সরকার এখন পর্যন্ত জাতীয় গ্রিড এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সরকার এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এনেছে। ২০০৯ সালে দেশে ৪৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। যেখানে ২০০৯ সালে এ সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগ আরো জানায়, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে ৪ কোটি ১৪ লাখে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২০০৯ সালে সেচ সংযোগ ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার, বর্তমানে সেচ সংযোগ সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার ২৮ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।